মোঃ মাফুজুর রহমান নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে একজন এসএম আলমগীর কবির (৪৮)। বেড়ে উঠেছেন নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার কোলা ইউনিয়নে গয়রা সরদারপাড়া গ্রামের সাধারণ এক দিন মজুর পরিবারে। প্রশ্ন- ফাঁস চক্রে জড়িত থেকে অল্পদিনেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠেন নিজেকে অনেক বড় চাকরিজীবীর পাশাপাশি চাকরির কোচিং ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেওয়া এই ব্যক্তি প্রশ্নফাঁসকান্ডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পিএসসির সহকারী পরিচালক এসএম আলমগীর কবির হঠাৎ অঢেল সম্পদের মালিক বনে যাওয়ার এ রহস্য হিসেবে তিনি নিজ গ্রামের প্রায় একশজনকে সরকারি চাকরি দিয়েছেন। এছাড়া নওগাঁ, বগুড়া, রাজশাহী এবং ঢাকাসহ সারাদেশেই তিনি হাজার হাজার মানুষকে মোটা অর্থের বিনিময়ে সরকারি চাকুরি দিয়েছেন এই অবৈধ পন্থায়। এসব চকুরি দেয়ার জন্য তিনি ঢাকা এবং বগুড়ায় ‘জব কর্ণার সাঁটলিপি এন্ড কম্পিউটার প্রশিক্ষন ইনস্টিটিউট’ নামে কোচিং সেন্টার খুলে এসব চাকুরি প্রত্যাশিদের সাথে যোগাযোগ করে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার মোটা অর্থের বিনিময়ে ফাঁসের প্রশ্নপত্র সরবারহ করতেন। আর এভাবেই অবৈধ পন্থায় খুলেছে তার ভাগ্য। আলমগীর কবিরের প্রশ্নফাঁসের ব্যপারটি সামনে আসার পর অবাক প্রতিবেশীরাও। এ বিষয়ে মুখ খুলতে চায়না কেউ স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও তার বাবা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। ছাত্রজীবনে ছোট ভাই হুমায়ুন কবিরসহ কাবরসহ আলমগীর কবির অন্যের জমিতে কাজ করতেন। কিন্তু পিএসসিতে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর চাকরি হওয়ার পর বদলে যেতে থাকে তাদের অবস্থা। এরপর একই দপ্তরে
পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন সহকারী পরিচালক। ছোট ভাই হুমায়ুন কবির ছিলেন সৌদি প্রবাসী গাড়ি চালকসেখানে চাকরি ছাড়িয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন আলমগীর, পাইয়ে দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে চাকরি। ছোট বোন মিনিও একই মন্ত্রণালয়ের স্টেনোগ্রাফার হিসেবে যোগ দেন। তিনি রাজশাহীতে কর্মরত। পিএসসিতে চাকরির পাশাপাশি আলমগীর বগুড়া ও ঢাকায় কোচিং সেন্টার গড়ে তুলেছেন। এগুলোর মাধ্যমেই সরকারি চাকরিপ্রার্থী জোগাড় করেন; যারা প্রশ্ন কিনে চাকরি পেতে আগ্রহী। প্রশ্নফাঁসকান্ডে আলমগীর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামাই করলেও এলাকায় তেমন কিছুই করেননি। তার বয়োবৃদ্ধ বাবা আবুল কাসেম বলেন, তার ছেলের ঢাকায় বিলাশ বহুল বাড়ি এবং গাড়ি থাকলেও গ্রামের বাড়িতে তেমন কিছুই করেননি। মাঝে মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বাড়িতে আসে এবং তাদের পরিবারের খরচ দিয়ে যায়। তিনি বলেন, সম্প্রতি আলমগীর গ্রামের বাড়িতে বিঘা দশেক জমি কিনেছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না প্রসঙ্গত, সদ্য অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে পিএসসির দুজন উপপরিচালক, দুজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় তাদের। তার মধ্যে ৬ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি ১১ জন দেননি। ফলে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সিআইডি বলছে, প্রশ্নফাঁসের ঘটনার মূলে ছিলেন তিনজন। তারা পিএসসির উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও মো.জাহাঙ্গীর আলম এবং সহকারী পরিচালক এসএম আলমগীর কবির। এই তিনজনই মূলত প্রশ্নফাঁসে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। চক্রের অন্য সদস্যরা কেউ চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করতেন, কেউ প্রশ্নপত্র পেয়ে তার সমাধান করতেন, আবার কেউ অর্থের লেনদেন করতেন।